ভারতের রাজধানী দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ওই এলাকার অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কাজ – এই মর্মে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি ও তার সমর্থক বজরং দল, ভিএইচপি-র মতো সংগঠনগুলো। যদিও এমন দাবির কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কেউই হাজির করতে পারেনি।
বিভিন্ন আঞ্চলিক হিন্দি পত্রিকা ও হিন্দি টিভি চ্যানেলেও লাগাতার বলা শুরু হয়েছে, জাহাঙ্গীরপুরী আসলে ‘বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের আস্তানা’ এবং সেদিন তারাই সেখানে হামলার সূচনা করেছে।
দাঙ্গার সময় আহত হওয়া একজন পুলিশকর্মীকে উদ্ধৃত করেও বলা হচ্ছে, তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় হামলাকারীরা বাংলায় স্লোগান দিচ্ছে বলেও নাকি শুনেছিলেন।
বস্তুত জাহাঙ্গীরপুরীতে হিংসার দায় যেভাবে কথিত বাংলাদেশিদের ওপর চাপানো হচ্ছে, তা রীতিমতো পরিকল্পনামাফিক বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। অনেক হিন্দি চ্যানেলে ও খবরের কাগজেও ইতিমধ্যে বলা শুরু হয়েছে, জাহাঙ্গীরপুরীর দাঙ্গা আসলে বাংলাদেশিদেরই কাজ। কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কথাও জুড়ে দিচ্ছেন।
যদিও ওই এলাকায় যে আসলেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বা রোহিঙ্গারা থাকেন – এমন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কেউই হাজির করতে পারেনি।
জনপ্রিয় হিন্দি দৈনিক জাগরণে খবরের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি ঘুসপেটিয়াদের (অনুপ্রবেশকারী) কব্জায় জাহাঙ্গীরপুরী’। তাদের খবরে আরও বলা হয়, ওই এলাকার বারোটি ব্লকের বেশির ভাগেই রোহিঙ্গারা থাকছেন এবং সে কারণে এলাকায় অপরাধের ঘটনাও বাড়ছে।
এর মধ্যে জল্পনা আরও ইন্ধন পেয়েছে দাঙ্গায় গুলিবিদ্ধ পুলিশ কর্মী মেধালাল মীনার বিবৃতিতে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই দিল্লি পুলিশের ওই সাব-ইনস্পেক্টর সাংবাদিকদের বলেন, “ভিড়ের মধ্যে তলোয়ার দোলাচ্ছিল একদল লোক, আমি বাংলাদেশি ভাষায়, মানে বাংলাতে কিছু স্লোগানবাজিও শুনেছিলাম।”
“ওই ভিড় থেকেই আমার ওপর গুলি চালানো হয়, এছাড়া আমার অনেক সহকর্মীও আহত হয়েছেন”, বলেন মেধালাল মীনা।
দিল্লি বিজেপির প্রধান আদেশ গুপ্তাও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, ”রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশিদের আপনারা কি জামাই আদরে দিল্লিতে এনে বসাচ্ছেন?”
জাহাঙ্গীরপুরী এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের এ অভিযোগ কয়েক বছর ধরেই চলছে। কিন্তু মুসলিমরা একথা অস্বীকার করে বলছেন, তারা দিল্লিতে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্য থেকে।
এদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের শ্রমিক বা বাতিল লোহালক্কড়ের জিনিস বিক্রি করেন।
“আপনি আমাদের দলিলপত্র চেক করে দেখতে পারেন” – বিবিসির সংবাদদাতাকে বলছিলেন সাজদা নামের এক বাসিন্দা। তার দুঃখ, মিডিয়ায় পক্ষপাতদুষ্ট প্রচারের কারণে এখানে মুসলিমদের সাথে অপরাধীর মত আচরণ করা হচ্ছে।
ওয়েবসাইট নকশা প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট